৫। গজবি বানর বাদে হজরত নুহ (আঃ) অর লগে ওয়াদা
হজরত মুছা (আঃ) এ লেখছইন:
(তৌরাত শরিফ, পয়দা নামা ৬:১-৯:১৭)
 দুনিয়ার উপরে যেবলা মানুষ বাড়া আরম্ভ অইলো, আর বউত পুড়িন্তরও জনম অইলো।  তেউ আল্লার খাদিম অকলে অউ পুড়িন্তরে খুবছুরত দেখিয়া, যে যারে খুশি তারে বিয়া করাত লাগলা।  ইতা দেখিয়া মাবুদে কইলা, “আমার রুহ হামেশা মানষর লগে থাকত নায়। মানুষ তো খালি লউ আর গোস্ত, অখন থাকি আমি তারারে একশো বিশ বরছ হায়াত দিয়ার।”  অউ পুড়িন্তর লগে আল্লার খাদিম অকলর মিলা-মিশার কারনে যে আওলাদর জনম অইলো, তারা আছলা পুরানা জমানার পয়লোয়ান অকল। হি সময় বা তার বাদেও দুনিয়াইত ছামুদ জাতর মানুষ আছিল।
 মাবুদে দেখলা, দুনিয়াইত মানষর নাফরমানি খুব বাড়ি গেছে, আর তারার দিলর খাইশ, খিয়াল-খুশি খালি খারাপির বায়।  ইতা দেখিয়া মাবুদে খুব তকলিফ পাইলা, তাইন দুনিয়াইত মানুষ পয়দা করছিলা করি খুব বেজার অইলা।  আর কইলা, “আমার পয়দা করা মানষরে, আর তারার লগে হকল জাতর জানুয়ার, পুক-জুক আর আছমানর পাখিও খতম করি দিমু। ইতারে পয়দা করিয়া আমার দিলো দুখ লাগের।”  অইলে নুহর উপরে মাবুদ খুশি আছলা।
 ইতা অইলো নুহর জিন্দেগির বয়ান। নুহ একজন কামিল মানুষ, তান আমলর মানষর মাজে তাইনউ আছলা পাক-পরেজগার। আল্লার লগে তানর খাছ দিদার আছিল। ১০ সাম, হাম আর ইয়াফেত নামর তান তিন পুয়া আছিল।
১১ ই সময় আল্লার চখুত হারা দুনিয়াই গুনায় পচি গেছে আর জুর-জুলুমে ভরি গেছে। ১২ আল্লায় দুনিয়ার বায় চাইয়া দেখলা, ইতা গুনায় পচি গেছে। কারন দুনিয়ার মানষর খাইছলত বে-পথে গেছেগি। ১৩ ইতা দেখিয়া আল্লায় নুহরে কইলা, “তামাম মানুষ জাতরে আমি খতম করিলাইতাম ঠিক করছি। মানষর লাগি দুনিয়াই জুর-জুলুমে ভরি গেছে। মানষর লগে লগে দুনিয়ার হকলতা আমি শেষ করিলিতাম। ১৪ তুমি গফরর তক্তা দিয়া তুমার লাগি একখান জাজ বানাও। এর ভিতরে আলগা আলগা কুঠা থাকব। আর জাজর বারে-ভিতরে আলকাতরা লাগাইও। ১৫ জাজখান লাম্বায় তিনশো আত, পাশে পইঞ্চাশ আত আর খাড়া-উবি তিশ আত বানাইও। ১৬ আর চালো থাকি এক আত তলে চাইরোবায় খিড়কি রাখবায়, আর দুয়ার দিবায় জাজর এক কান্দাত। জাজখান তিতালা বানাইও। ১৭ দেখিও, আমি দুনিয়াইত অলা বইন্যা দিমু, আছমানর তলে যতো জানদারে দম ফালায় হকলতাউ বিনাশ অইযিব। দুনিয়াইর হকল জানদারউ মরিযিব। ১৮ খালি তুমার লগে আমার ওয়াদা জারি রাখমু। তুমি গিয়া জাজো উঠবায়, আর তুমার লগে তুমার পুয়াইন, তুমার বিবি আর তুমার পুয়াইন্তর বউ-ও। ১৯ আর জান বাচানির লাগি তুমি হকল জাতর জানদারর বেটা-বেটির জুড়া মিলাইয়া তুমার লগে জাজো তুলবায়। ২০ পরতেক জাতর পাখি, হেমান-জানুয়ার আর মাটির মাজে বুকে চলরা জানদাররে বাচানির লাগি জুড়া জুড়া করি তুমার গেছে আনবায়। ২১ আর তুমি হকল জাতর লাগি খানির জিনিস যোগাড় করি রাখবায়। ইতা তুমার আর তারার খানি অইবো।” ২২ নুহে আল্লার হুকুম মাফিক হকলতাউ করলা।
 আর মাবুদে নুহরে কইলা, “তুমি আর তুমার পরিবারর হকল আইয়া জাজো উঠবায়। আমি দেখিয়ার ই জমানার মানষর মাজে তুমিউ খালি দীনদার।  তুমি হালাল জানুয়ার অকল থাকি নর-মেদি মিলাইয়া সাত জুড়া করি আর হারাম জানুয়ার থাকি এক জুড়া করি তুমার লগে লইও।  আছমানো উড়রা পাখির মাজ থাকি নর-মেদি মিলাইয়া সাত জুড়া করি লইও। দুনিয়ার মাজে এরার বংশ বাচানির লাগি ইখান করিও।  আমি সাত দিন বাদে দুনিয়াইর উপরে চাল্লিশ দিন চাল্লিশ রাইত একলাগারে মেঘ দিমু, আর হকল জানদাররে দুনিয়া থাকি খতম করমু।”  মাবুদর হুকুম মাফিক নুহে হকল কাম করলা।
 বইন্যা শুরুর সময় নুহর বয়স আছিল ছয়শো বরছ।  বইন্যা থাকি বাচার লাগি নুহ, তান বিবি, তান পুয়াইন আর পুয়াইন্তর বউরে লইয়া জাজো গিয়া উঠলা। ৮-৯ আল্লার হুকুম মাফিক হালাল-হারাম জানুয়ার, পাখি, বুকে চলরা জানদারর নর-মেদি মিলিয়া জুড়া জুড়া অইয়া নুহর গেছে আইয়া জাজো হামাইলা। ১০ অউ সাত দিন বাদে দুনিয়াইত বইন্যা অইলো।
১১ নুহর ছয়শো বছরর সময় দুছরা মাসর সতরো তারিখ পাতালর হকল পানি বার অইতো লাগল, আর আছমান যেনু ফাটি গেল। ১২ চাল্লিশ দিন চাল্লিশ রাইত দুনিয়াইর উপরে মেঘ অইলো। ১৩ যেদিন মেঘ শুরু অইলো, ইদিন নুহ, তান বিবি, তান পুয়াইন সাম, হাম, ইয়াফেত আর তারার বউ অকলও জাজো আইয়া উঠলা। ১৪ তারার লগে জুড়া জুড়া করি হকল জাতর জংলি জানুয়ার, পালা হেমান, মাটির মাজে বুকে চলরা জানদার, পাখি আর ডাখনা আলা হকলতাও উঠলা। ১৫ দম ফালাইয়া বাচে ইলা হকল জাতর জানদার নুহর গেছে আইয়া জাজো উঠছিল। ১৬ আল্লার হুকুম মাফিকউ নর-মেদির জুড়া মিলিয়া তারা উঠছিল। এরবাদে মাবুদে জাজর দুয়ার বন্দ করি দিলা।
১৭ চাল্লিশ দিন ধরি দুনিয়াইত পানি বাড়তেউ থাকলো। পানি বাড়ি যাওয়ায় জাজখান মাটি থাকি উপরে ভাইয়া উঠলো। ১৮ বাদে পানি খুব বাড়ল আর জাজখান পানির উপরে চলাচল করলো। ১৯ আর পানি বাড়তেউ থাকলো। এতে যেনো যতো বড় বড় পাড় আছিল, হক্কলতা বুড়ি গেল। ২০ হকল পাড়-পর্বত বুড়িয়া পানি আরো পনরো আত উপরে উঠলো। ২১ আর দুনিয়াইত চলরা হকল জানদার, মানি পাখি, পালা হেমান, জংলি জানুয়ার আর পাল বান্দিয়া ঘুররা হকলতা, মানষর লগে বিনাশ অইগেল। ২২ মাটির উপরে যতো রকমর যতো জানদার দম ফালাইয়া বাচে ইতা হকলতাউ মরিগেল। ২৩ আল্লায় অউ নমুনায় জমিনর হকল জানদার দুনিয়াইর উপর থাকি ফুছিলাইলা। এতে মানুষ, জানুয়ার, বুকে চলরা জানদার আর আছমানর পাখি দুনিয়াই থাকি ছাফ অইগেল। খালি নুহ আর তান লগে যারা আছিল, তারাউ বাচিয়া রইলা। ২৪ দুনিয়া দেড়শ দিন পানিত বুড়াইল রইল।
 জাজো নুহ আর তান লগে যতো জানদার আর পালা হেমান আছিল, আল্লায় তারার কথাও ফাউরিলা না। তাইন দুনিয়াইত বাতাস চালাইলে পানি কমা শুরু অইলো।  মাটির তল থাকি পানি বারনি আর আছমান থনে মেঘ পড়ার ফাটা বন্দ অইগেল, আর মেঘও দম লইলো।  মাটির উপরর পানি হরি গেল, আর দেড়শ দিন বাদে দেখা গেল পানি বউত কমছে।  সাত নম্বর মাসর সতরো তারিখ জাজখান আরারাতর পাড়ি এলাকাত গিয়া আটকিলো।  এরবাদেও পানি কমাত থাকল, আর দশ নম্বর মাসর পয়লা দিন পাড় অকলর মাথা দেখা গেল।
 এর চাল্লিশ দিন বাদে নুহে জাজর খিড়কি খুললা।  আর খিড়কিবায় এক কাউয়া ছাড়লা। মাটি থাকি পানি না হুকানি পর্যন্ত কাউয়াটা আওয়া-যাওয়াত রইল।  মাটির উপর থনে পানি কমছে কি না দেখার লাগি নুহে বাদে একটা পারো ছাড়লা।  ই সময়ও আস্তা দুনিয়াইত পানি আছিল করি পাও থইবার জাগা না পাইয়া পারোটা হিরবার ফিরিয়া আইল। তাইন আত বাড়াইয়া তারে ভিতরে আনলা। ১০ হেশে তাইন আরো সাত দিন বার চাইয়া হিরবার তারে ছাড়লা। ১১ হাইঞ্জা বালা হে তান গেছে ফিরিয়া আইল, আর তার ঠোটো আছিল জয়তুন গাছর হাজমা পাতা, তাইন বুজলা মাটির উপর থাকি পানি কমি গেছে। ১২ আরো সাত দিন বাদে তাইন হিরবার পারোটা ছাড়লা, ইকটা আর ফিরিয়া আইলো না।
১৩ নুহর বয়স ছয়শো এক বছরর সময় পয়লা মাসর পয়লা দিন মাটির উপর থাকি পানি হরি গেল, আর নুহে জাজর চাল খুলিয়া চাইয়া দেখলা, মাটি হুকানি ধরছে। ১৪ দুছরা মাসর সাতাইশ দিনর দিন মাটি একইবারে হুকাই গেল। ১৫ আল্লায় তানরে কইলা, ১৬ “তুমি তুমার বিবি, তুমার পুয়াইন আর তুমার পুয়াইন্তর বউরে লইয়া জাজ থাকি বার অইয়া আও। ১৭ আর তুমার লগে যতো জাতর জানদার আছে—পাখি, জানুয়ার আর মাটির মাজে বুকে চলরা জানদার—তারারেও বার করি লইয়া আও, যেনু হারা দুনিয়াই জুড়ি তারা ছিতরিয়া গিয়া ফলআলা অইয়া বাড়ে।” ১৮ তেউ নুহে তান বিবি, তান পুয়াইন আর তারার বউরে লইয়া জাজ থাকি বার অইলা। ১৯ তারার লগে দুনিয়াইর হকল জানুয়ার, পুক-জুক আর পাখি, এক কথায় দুনিয়াইত চলরা হকল জানদার, যারযির জাতমত বার অইলো।
২০ বাদে নুহে মাবুদর নামে একখান কুরবানি খানা বানাইলা, আর পরতেক জাতর হালাল পশু-পাখি থাকি এক একটা লইয়া জবো করিয়া, জালাইয়া কুরবানি দিলা। ২১ মাবুদ ই কুরবানির ধুমার খুশবুয়ে খুশি অইলা, আর তাইন কইলা, “মানষর লাগি আমি আর কুনু সময়ও মাটিরে লান্নত দিতাম নায়, যদিও হুরুবালা থাকিউ মানষর মনর খিয়াল খারাপির বায় থাকে। ইফিরা যেলা হকল জানদাররে মারছি, ইলাখান আর কুনু দিনউ মারতাম নায়। ২২ যতদিন ই দুনিয়াই থাকব, অতদিন নিয়মমত বিচ ফালানি আর ফসল কাটা, ঠান্ডা আর গরম, বারিশা আর এওত, দিন আর রাইত চলতেউ থাকব।”
 আল্লায় নুহ আর তান পুয়াইন্তরে বরকত দিয়া কইলা, “তুমিতাইন ফলআলা অইয়া বাড়িয়া দুনিয়াই ভরি যাও।  দুনিয়াইর জানুয়ার, আছমানর পাখি, মাটির মাজে বুকে চলরা জানদার আর দরিয়ার মাছ, হকলেউ তুমরারে ডর-ভয় করি চলব। ইতারে তুমরার আতো দেওয়া অইলো।  যেলা তুমরারে খেতর ফল-ফসল আর তরি-তরকারি দিছলাম, অউলা অখন জিতা জানদার হকলরেও তুমরার খানির লাগি দিলাম।  খালি লউ-সহ গোস্ত তুমরা খাইও না, লউ অইলোগি জান।  কেউ যুদি মানষরে খুন করে তে আমি অবশ্যউ তার খুনর বদলা লইমু। হে জানুয়ার অউক বা মানুষ অউক, মানষর জান যে নেয়, তার জানও দেওন লাগব।  মানষর লউ যে বার করে, মানষেও তার লউ বার করব, কারন আল্লায় মানষরে নিজর ছুরতে বানাইছইন।  তুমিতাইন বেশ করি ফলআলা অইয়া বাড়ো আর দুনিয়াইত ছিতরিয়া যাও।”
 বাদে আল্লায় নুহ আর তান পুয়াইন্তরে কইলা,  “হুনো, আমি জবান দিয়ার, তুমরা আর তুমরার বাদর হকল মানষরে, ১০ আর পাখি, পালা হেমান আর দুনিয়াইর যতো জানুয়ার তুমরার লগে জাজ থাকি বার অইছে, তারারেও। ১১ জবানটা অইলো, বানর পানি দিয়া আর কুনু সময়উ হক্কল জানদাররে মারা অইতো নায়, আর তামাম দুনিয়াই ছাফ করার লাগি ইলা কুনু বানও অইতো নায়।” ১২ আল্লায় আরো কইলা, “যে জবান আমি তুমরারে আর তুমরার লগর জানদার অকলরে দিলাম, ইকটা কিয়ামত পর্যন্ত বওয়াল রইবো। ১৩ আর মেঘর কালনির মাজে আমার রংধেনু দিলাম, ইকটা অইলো দুনিয়াইত আমার জবানর নিশানা। ১৪ যেবলা আমি দুনিয়াইর উপরে কালনি দিমু, ই সময় অউ রংধেনু দেখবায়। ১৫ আর অউ সময়উ আমি তুমরার আর হকল জানদারর লগে আমার জবানর কথা ইয়াদ করমু। আর কুনু সময়উ বইন্যা অইয়া হকল জানদাররে পানি দিয়া ধইয়া নিতো নায়। ১৬ কালনির মাজে যেবলা হি রংধেনু দেখা যাইব অউ সময় আমি দুনিয়াইর হকল জানদারর লগে আমার ই হামেশাকুর জবানর কথা ইয়াদ করমু।” ১৭ হেশে আল্লায় নুহরে কইলা, “দুনিয়াইর হকল জানদারর লগে আমি যে জবান দিছি, ইকটা অইলো তার নিশানা।”
 

১। অউ বয়ানর মাজে কিতা-কিতি পছন্দ অর?
২। বুজার লাগি কিতা-কিতি কঠিন মনো অর?
৩। অউ বয়ানর মাজে মানষর বেয়াপারে আমরারে কিতা-কিতি হিকায়?
৪। অউ বয়ানর মাজে আল্লা পাকর বেয়াপারে আমরারে কিতা হিকায়?
৫। অউ বয়ান কি লাখান মানার লাগি আল্লায় চাইন?