হজরত ইছার দুখ-কষ্ট আর মউত (১৪:১-১৫:৪৭)
হজরত ইছারে হাজানির ভেদ
১৪
১ আজাদি ইদ আর খামির ছাড়া রুটির ইদর খালি দুই দিন বাকি রইছে।
বড় ইমাম আর মৌলানা অকলে,
হজরত ইছারে মানষর আফরখে ধরিয়া কাতল করার ধান্দা লাগাইলা।
২ তারা কইলা,
“ইদর সময় তারে ধরতাম নায়।
ধরলে মানষে গন্ডগোল লাগাই দিতো পারে।”
৩ ইছা অউ সময় বায়ত-আনিয়া গাউর পচা-কুষ্ঠ বেমারি সাইমনর বাড়িত আছলা।
অনো বইয়া তাইন খানা খাইরা,
আখতাউ এক বেটি মানষে চিনর এক বোতলো করি খুব দামি খাটি আতর লইয়া আইয়া,
বোতল ভাংগিয়া হকল আতর তান মাথাত ঢালি দিলো।
৪ ইতা দেখিয়া হিনো আজির কুনু কুনু জনে না-খুশ অইয়া একে-অইন্যে কইলো,
“ই আতর ফুটাইন কেনে বরবাদ করা অইলো?
৫ ই ফুটিন বেচিলে তো তিনশো দিনার পাইয়া গরিব অকলরে বিলাই দেওয়া গেলো অনে।”
অতার লাগি তারা বেটিরে বকা-জকা করলা।
৬ অইলে ইছায় কইলা,
“অইছে,
তানরে আর কুন্তা কইও না।
তাইন তো আমার লাগি খুব সুন্দর কাম করছইন।
৭ গরিব অকল তো হামেশাউ তুমরার লগে রইবা।
তুমরার যেবলা মনে চায় তারারে সাইয্য করতায় পারবায়।
অইলে আমারে তো হামেশা পাইতায় নায়।
৮ বেচাড়িয়ে যেখান পারছইন অখানউ করছইন।
এইন আইয়া আমার গতরো আতর ঢালিয়া,
দাফন-কাফনর লাগি আমারে আগেউ জুইত করছইন।
৯ আমি তুমরারে হক কথা কইয়ার,
দুনিয়ার যেকুনু জাগাত আল্লার খুশ-খবরি তবলিগ করার সময়,
অউ বেচাড়িরে মনো করার লাগি,
তান ই কামর কথা খানও কওয়া যাইবো।”
১০ বাদে তান বারোজন সাহাবির মাজর একজন,
এন নাম ইহুদা ইস্কারিয়াত,
এইন ইছারে ধরাইয়া দেওয়ার লাগি বড় ইমাম অকলর গেছে গেলা।
১১ ইমাম অকলে হুনিয়া খুব খুশি অইয়া কইলা,
“তারে ধরাইয়া দিলে তুমারে টেকা দিমু।”
তেউ ইহুদায় তানরে ধরাই দেওয়ার সুযোগ তুকানিত রইলো।
হজরত ইছার আখেরি ইদ
১২ খামির ছাড়া রুটির ইদর পয়লা দিন,
আজাদি ইদর লাগি মেড়ার বাইচ্চা জবো করা অইতো।
এরদায় সাহাবি অকলে ইছারে জিকাইলা,
“হুজুর,
আমরা কুন জাগাত গিয়া আপনার লাগি ইদর খানা তিয়ার করতাম?”
১৩ অউ ইছায় তান দুইজন সাহাবিরে কইলা,
“তুমরা টাউনো যাও।
গিয়া দেখবায় হনো এক বেটা মানষে খৈলাদি পানি ভরিয়া নিরা।
তুমরা তান খরে খরে যাইও।
১৪ তাইন যে বাড়িত গিয়া হামাইবা,
হউ বাড়ির মালিকরে তুমরা কইও,
‘ছাব,
মুরশিদে কইছইন,
সাহাবি অকলরে লইয়া আমি যেখানো আজাদি ইদর খানা খাইতাম,
হউ মুছাফিরখানা খান দেখাই দেউক্কা।’
১৫ তাইন তুমরারে উপর তালাত হাজাইল-পাড়াইল এক বড় কুঠা দেখাই দিবা।
তুমরা অনো হকলতা তিয়ার করিও।”
১৬ তেউ সাহাবি অকল গিয়া টাউনো হামাইলা।
হামাইয়া ইছায় যেলাখান কইছলা,
ঠিক অউ লাখান হকলতা পাইলা আর ইদর খানা তিয়ার করলা।
১৭ হাইঞ্জা বালা ইছায় তান বারোজন সাহাবিরে লইয়া অনো আইলা।
১৮ আইয়া খানি খাওয়ার সময় তাইন কইলা,
“আমি তুমরারে হক কথা কইরাম,
তুমরার মাজর এক জনেউ বেইমানি করিয়া আমারে ধরাই দিবো,
হে অখন আমার লগে বইয়া খার।”
১৯ ইখান হুনিয়া তারা খুব বেজার অইগেলা।
আর এক এক করি জিকাইলা,
“হুজুর,
ই জন কিতা আমি নি?”
২০ তাইন কইলা,
“হে অউ বারোজনর মাজরউ একজন।
হে অখন আমার লগে থালো আত হারার।
২১ বিন-আদমর মউতর বেয়াপারে আছমানি কিতাবো যেলা লেখা আছে,
তান মউত তো অউলাউ অইবো,
অইলে আফছুছ হউ মানষর লাগি,
যে তানরে ধরাইয়া দিবো।
দুনিয়াত তার জনম না অওয়াউ,
তার লাগি বউত ভালা আছিল।”
২২ খানাত রইছইন,
অউ সময় ইছায় রুটি আতো লইয়া আল্লার শুকরিয়া আদায় করিয়া,
ছিড়িয়া টুকরা টুকরা করি সাহাবি অকলর আতো দিয়া কইলা,
“অউ নেও,
মনো করো ইতা আমার শরিল।”
২৩ বাদে তাইন আংগুরর শরবতর পিয়ালা লইয়া আল্লার শুকরিয়া জানাইয়া এরারে দিলা।
এরা হকলে অউ পিয়ালা থাকি শরবত খাইলা।
২৪ ইছায় কইলা,
“খাও,
মনো করো ইতা আমার লউ।
অউ লউর জরিয়ায় আদম জাতির বউতর বাচিবার লাগি নয়া উছিলা কাইম করা অইবো।
২৫ আমি হাছা কথা কইরাম,
যেই পর্যন্ত আল্লার বাদশাইত দাখিল অইয়া আমি আংগুরর শরবত না খাইছি,
অতো দিন ই লাখান শরবত আর খাইতাম নায়।”
২৬ হেশে হকলে মিলি এক গজল গাইয়া,
ঘর থাকি বার অইয়া জয়তুন পাড়ো গেলাগি।
হজরত পিতরে অস্বীকার করার আগাম ইশারা
২৭ পাড়ো গিয়া ইছায় তান সাহাবি অকলরে কইলা,
“তুমরা হকলেউ তো আমারে ফালাইয়া বাগিবায়।
আল্লার কালামো আছে,
‘আমি পালর রাখালরে মারিলিমু,
তেউ পালর মেড়াইন চাইরোবায় ছিতরিযিবা।’
২৮ অইলে আমারে মুর্দা থাকি জিন্দা করার বাদে,
তুমরার আগেউ আমি গালিলো যাইমুগি।”
২৯ পিতরে তানরে কইলা,
“হুজুর,
হকল বাগি গেলেও আমি বাগিতাম নায়।”
৩০ ইছায় কইলা,
“তে হুনো,
আমি তুমারে কইরাম,
আইজ পতাবালা মুরগায় দুইবার বাং দিবার আগেউ,
তুমি তিনবার কইবায়,
তুমি আমারে চিনো না।”
৩১ অইলে পিতরে আরো বড় গলায় কইলা,
“হুজুর অউ কিতা কইন,
আপনার লগে যুদি আমার মরনও অয়,
তা-ও আমি কুনুমন্তেউ কইতাম নায় আমি আপনারে চিনি না।”
হকল সাহাবিয়েও অউ লাখান কইলা।
গেতশিমানি বাগানো হজরত ইছা
৩২ বাদে হজরত ইছায় তান সাহাবি অকলরে লইয়া গেতশিমানি নামর এক বাগানো আইলা।
আইয়া তাইন এরারে কইলা,
“আমি যতো সময় ধরি দোয়া করমু,
অতো সময় তুমরা অনো বওয়াত রইও।”
৩৩ অখান কইয়া তাইন পিতর,
ইয়াকুব আর হান্নানরে তান লগে রাখলা,
মনর দুখ আর জালায় তাইন বড় তকলিফ পাইলা।
৩৪ তাইন এরারে কইলা,
“দুখে আমার জান বার অই যারগি।
তুমরা হকল অনো রও আর হজাগ থাকো।”
৩৫ কইয়া থুড়া হরিয়া গিয়া তাইন মাটিত সইজদাত পড়িয়া আরজ করলা,
সম্ভব অইলে ই মছিবতর অখতখান হরিযিবার লাগি।
৩৬ তাইন কইলা,
“ও আব্বা,
আমার অলি,
তুমি তো হকলতাউ করতায় পারো।
তুমি আমার উপর থাকি আনেওয়ালা অউ মছিবত খান হরাইলাও।
অইলে ইতা আমার ইচ্ছায় নায়,
তুমার মর্জি মাফিকউ অউক।”
৩৭ সইজদা থাকি উঠিয়া তাইন সাহাবি অকলর গেছে আইয়া দেখলা,
এরা ঘুমাই গেছইন।
অউ তাইন পিতররে হজাগ করি কইলা,
“সাইমন,
তুমি ঘুমাই গেলায় নি?
একখান ঘন্টাও হজাগ রইতায় পারলায় না নি?
৩৮ হজাগ রও,
পরিক্ষা থাকি বাচতায় করি দোয়া করো।
দিলর মাজে নিচয় খিয়াল আছে,
অইলে কায়া তো কমজুর।”
৩৯ বাদে তাইন হিরবার গিয়া হউ একই দোয়া করলা।
৪০ ফিরিয়া আইয়া দেখলা,
এরা হিরবার ঘুমাই গেছইন,
ঘুমে তারার চউখ ফালাই দের।
তারা ইছারে কিতা জুয়াপ দিতা,
কুন্তা বুজলা না।
৪১ তিন নম্বর বার তাইন আইয়া এরারে কইলা,
“তুমরা দেখি অখনও আরামে ঘুমাইরায়।
আইচ্ছা অইছে,
সময় আইচ্ছে তো।
দেখরায় নি,
বিন-আদমরে গুনাগার অকলর আতো সমজাই দেওয়া অর।
৪২ উঠো,
আমরা রওয়ানা দেই।
আমারে যেগিয়ে দুশমনর আতো ধরাই দিবো,
হে আইয়া আজিগেছে।”
হজরত ইছা আল-মসী দুশমনর আতো বন্দি
৪৩ তাইন এরার লগে মাতো রইছইন,
অউ সময় ইহুদা হনো আইলো।
হে আছিল বারোজন সাহাবির মাজর একজন।
তার লগে অইয়া আরো বউতে লাঠি-ছটা-তলোয়ার লইয়া আইলো।
বড় ইমাম,
মৌলানা আর মুরব্বি অকলে এরারে পাঠাইছইন।
৪৪ তানরে যেগিয়ে ধরাইয়া দিতো,
হে তার লগর এরারে আগে হিকাইয়া দিছিল,
“আমি গিয়া যেন গালো হুংগা দিমু,
এইনউ হউ জন।
তুমরা এনরে বন্দি করিয়া খুব সাবধানে লইয়া যাইও।”
৪৫ তেউ ইহুদায় সুজা-সুজি ইছার গেছে গিয়া কইলো,
“হুজুর!”
কইয়া হে তানরে হুংগা দিলো।
৪৬ লগে লগে তারা আইয়া ইছারে ধরিলিলো।
৪৭ তান কান্দাত যেরা উবাত আছলা,
এরা একজনে নিজর তলোয়ার বার করিয়া পরধান ইমামর গুলামরে ছেদ মারলা,
ছেদর লগে তার এক কান কাটিয়া পড়িগেল।
৪৮ ইছায় অতা মানষরে কইলা,
“কিতাবা,
আমি কুনু চুর-ডাকাইত নি,
তুমরা দেখি লাঠি-ছটা-তলোয়ার লইয়া আমারে ধরাত আইছো?
৪৯ আমি তো পরতেক দিন বায়তুল-মুকাদ্দছো গিয়া তুমরার ছামনেউ তালিম দিতাম।
অউ সময় তো তুমরা আমারে ধরলায় না।
নিচয় আল্লার কালামর আয়াত তো ফলিতে অইবো।”
৫০ তানরে বন্দি করতেউ তান হকল সাহাবি তানে থইয়া বাগি গেলা।
৫১ খালি একজন জুয়ানে একখান লংগি ফিন্দিয়া তান খরে খরে গেল।
অইলে মানষে যেবলা তারেও ধরতা চাইলা,
৫২ হে তার লংগি ফালাইয়া লেমটা অইয়া দৌড়াইয়া বাগিলো।
ফতোয়া কমিটির দরবারো বিচার
৫৩ অউ মানষে হজরত ইছারে ধরিয়া হারি পরধান ইমামর গেছে লইয়া গেল।
হনো বড় ইমাম অকল,
মুরব্বি আর মৌলানা অকলও একখানো দলা অইলা।
৫৪ সাহাবি পিতর ইছার গেছ থনে দুরই হরি হরি রইয়া তান খরে খরে গিয়া পরধান ইমামর বাড়ির উঠানো গেলা।
গিয়া হনো পারাদার অকলর লগে মিলিয়া আগুইন তাবানিত বইলা।
৫৫ বড় ইমাম অকলে আর ফতোয়া কমিটির হকল মানষে ইছারে কাতল করার লাগি কুনু নালিশ তুকাইলা,
অইলে পাইলা না।
৫৬ মজলিছো ইছার বিরুদ্ধে বউতে মিছা সাক্ষি দিলেও,
তারার সাক্ষির মিল অইলো না।
৫৭ তেউ আরো কয়জনে তান বিরুদ্ধে অউ মিছা সাক্ষি দিলো।
তারা কইলো,
৫৮ “আমরা হুনছি,
হে কইছে,
মানষর আতর বানাইল জেরুজালেমর অউ কাবা শরিফ,
আমি ভাংগিলিমু,
আর তিন দিনর মাজে কুনু মানষর আত না লাগাইয়া আমি আরকখান বানাইমু।”
৫৯ অইলে এরার সাক্ষিও মিললো না।
৬০ হেশে পরধান ইমাম উবাইয়া হকলর ছামনে ইছারে জিকাইলা,
“ওবা,
তুমি কুনু মাতর জুয়াপ দিতায় না নি?
ইতা মানষে তুমার বেয়াপারে কিতা সাক্ষি দিরা,
হুনরায় নি?”
৬১ অইলে তাইন কুনু জুয়াপ না দিয়া নিরাই রইলা।
পরধান ইমামে তানরে হিরবার জিকাইলা,
“তুমি কিতা আল্লাতালার ওয়াদা করা হউ আল-মসী নি,
তান খাছ মায়ার জন ইবনুল্লা নি?”
৬২ তাইন জুয়াপ দিলা,
“জিঅয়,
আমিউ হেইন।
আপনারা দেখবা,
আমি বিন-আদম আরশে-আজিমো আল্লা রাব্বুল আলামিনর ডাইনর তখতো বওয়াত আছি।
আর দেখবা,
আমি বেহেস্তি মেঘর খুটিত অইয়া দুনিয়াত তশরিফ আনিয়ার।”
৬৩ ইখান হুনিয়াউ পরধান ইমামে নিজর ফিন্নর কাপড় ছিড়িয়া কইলা,
“আর কুনু সাক্ষির জরুর আছে নি?
৬৪ আপনারা নিজর কানেউ তো হুনলা,
হে শিরিকি করলো।
তে অখন আপনারা কিতা রায় দিবা?”
অউ তারা হকলে তানে দুষি সাইবস্তো করিয়া,
কাতল করার হুকুম দিলো।
৬৫ কেউ কেউ তান উপরে ছেফ দিলো।
তান মুখ বান্দিয়া ঘুষি মারিয়া কইলো,
“হই,
তুইন বুলে নবী,
তে অখন ওহী কছ না।”
বাদে সিপাই অকলেও তানে নিয়া মাইর-ধইর করলো।
হজরত পিতরে তিনবার অস্বীকার করলা
৬৬ পিতর যেবলা লামাত উঠানো আছলা,
অউ সময় পরধান ইমামর এক বান্দি বেটি তান কান্দাত গেল।
৬৭ গিয়া তানরে আগুইন তাবানিত দেখিয়া,
ভালা করি তান বায় চাইয়া হারি কইলো,
“আপনেও তো অউ নাছারতর ইছার লগে আছলা।”
৬৮ পিতরে অস্বীকার করিয়া কইলা,
“না গো,
তুমি অউ কিতা কইরায়?
আমি ইতা কুন্তাউ জানি না,
বুজিও না।”
অখান কইয়া পিতর গেইটর ধারো গেলা,
আর অউ সময় মুরগায় বাং দিলাইলো।
৬৯ বান্দি বেটিয়ে যেবলা দেখলো,
পিতর অনো গিয়া উবাইছইন,
অউ তান কাছাত উবা মানষরে গিয়া তাই কইলো,
“অউ বেটাও এরার লগর একজন।”
৭০ পিতরে হিরবার না করলা।
অইলে তান কান্দাত যেরা উবা আছিল,
থুড়া বাদে তারা কইলা,
“তুমি নিচ্চয় এরার লগর,
তুমার বাড়িও তো গালিল জিলাত।”
৭১ পিতরে কইলা,
“আল্লার গজব পড়উক,
আমি কছম খাইয়া কইয়ার,
তুমরা অউ যার কথা কইরায়,
তারে আমি চিনিও না।”
৭২ অখান কইতেউ মুরগায় দুয়ারা বাং দিলো।
বাং হুনিয়াউ পিতরর মনো অইগেল,
ইছায় কইছলা,
“মুরগায় দুইবার বাং দিবার আগেউ তুমি তিনবার কইবায়,
তুমি আমারে চিনো না।”
অখান মনো অইতেউ তাইন আউ আউ করি কান্দন ধরলা।