হজরত ইছার বাতাইল সাত কিচ্ছা (১৩:১-৫২)
এক গিরস্তর জালা বাইন করার কিচ্ছা
১৩
১ হজরত ইছা অউ দিন ঘর থাকি বার অইয়া আওরর পারো গিয়া বইলা।
২ বইয়া হারলে বউত মানুষ তান গেছে আইয়া ভিড় লাগাই দিলা,
ভিড় দেখিয়া তাইন গিয়া এক নাওয়ো উঠিয়া বইলা আর হকল মানুষ পারো উবাই রইলা।
৩ অউ সময় তাইন কিচ্ছা হুনাই হুনাই নানান নমুনার তালিম দিলা।
তাইন কইলা,
“মনো করো,
এক গিরস্তে জালা বাইন করাত গেল।
৪ গিয়া বাইন করার বালা কিছু জালা আইলর মাজে পড়লো,
আর পাখিন্তে আইয়া ইতা খাইলিলো।
৫ তার কিছু জালা হুকনা-শক্ত মাটির উপরে পড়লো,
ই জালা ফুটিয়া আলি বার অইলেও তলে বেশি মাটি না থাকায়,
জলদি বাড়িলো।
৬ বাদে সুরুজ উঠিয়া হারলে জইর খাইলিলো,
আর তলর জড়ে রস না পাওয়ায় হুকাইয়া মরিগেল।
৭ কিছু জালা বন-জংলার মাজে পড়লো,
আর অউ বন-জংলা বাড়িয়া ইতারে জাতিয়া ধরলো।
৮ অইলে কিছু জালা ভালা জমিনো পড়লো,
ই জালায় ভালা ধান অইলো,
ইতার কুনু ছড়ায় তিশ,
কুনু ছড়ায় ষাইট,
কুনু ছড়ায় একশো গুন বেশি ধান ধরলো।”
৯ অউ কিচ্ছা হুনানির বাদে ইছায় কইলা,
“যার কান আছে,
হে হুনউক।”
১০ বাদে তান সাগরিদ অকলে কইলা,
“আপনে খালি কিচ্ছা কইয়া মানষরে তালিম দিরা কেনে?”
১১ তাইন কইলা,
“বেহেস্তি বাদশাইর গোপন রহস্য জানার সুযোগ তুমরারে দেওয়া অইছে,
অইলে বাকি মানষর গেছে ইতা বাতুনি রইছে।
১২ হুনো,
যার আছে,
তারে আরো দেওয়া অইবো,
তার আরো বাড়িবো।
অইলে যার নাই,
তার যেতা আছে,
অতাও কাড়িয়া নেওয়া অইবো।
১৩ এরলাগি আমি কিচ্ছার মাজদি এরারে তালিম দিরাম,
এরা তো দেখিয়াও দেখে না,
হুনিয়াও হুনে না আর কুন্তা বুজেও না।
১৪ এরার মাজদিয়াউ ইশায়া নবীর বাতাইল অউ আয়াত পুরা অইছে,
তাইন কইছলা,
তুমরা কানে হুনলেও কুন্তা বুজতায় নায়,
চউখে দেখলেও কুন্তা চিনতায় নায়।
১৫ ইতা মানষর দিল অসাড় অইগেছে,
তারার কানো তালা লাগি গেছে।
তারা যারযির চউখ মুজি বইরইছে,
যাতে চউখে না দেখে,
কানে না হুনে,
দিল দিয়া না বুজে।
কিযানু তারা তৌবা করিয়া
আমার বায় ফিরিযাইন,
আর আমি তারার শিফা করিলাই।
১৬ অইলে নেক-কপালি তো তুমরা,
তুমরার চউখে দেখে,
আর কানে হুনে।
১৭ আমি তুমরারে হক কথা কইরাম,
তুমরার চউখে যেতা দেখরায় আর কানে যেতা হুনরায়,
ইতা বউত নবী আর অলি-আউলিয়ায় দেখার আশা করলেও দেখার কপাল অইছে না,
আর হুনার আশা করলেও হুনার কপাল অইছে না।
১৮ “অখন তুমরারে অউ গিরস্তর কিচ্ছার মানি বুজাই দিরাম,
১৯ হুনো,
আইলর মাজে পড়া জালা দিয়া অলাখান মানষর বেয়াপারে বুজাইল অইছে,
যে মানষে বেহেস্তি বাদশাইর কথা হুনিয়াও বুজে না,
এরলাগি ইবলিছে আইয়া অউ জনর দিলো আল্লার যে কালাম বাইন করা অইছিল,
অতা কাড়িয়া নেয়গি।
২০ হুকনা-শক্ত মাটির উপরে পড়া জালাদি বুজাইল অইছে,
যেরা ই কালাম হুনে আর খুব খুশি অইয়া কবুল করে,
২১ অইলে তারার দিলো ভালামন্তে হামায় না,
এরলাগি ইতা থুড়া কয়দিন রয়,
বাদে ই কালামর লাগি কুনু জুলুম-মছিবত আইলেউ তারা খরলামি যায়।
২২ বন-জংলার মাজে পড়া জালাদি বুজাইল অইছে,
যেরা ই কালাম হুনে,
অইলে দুনিয়াবি চিন্তা-ভাবনা আর ধন-ছামানার মায়ায় ই কালামরে জাতিয়া ধরিলায়,
এরদায় কালামে কুনু ফায়দা অয় না।
২৩ আর ভালা জমিনো পড়া জালাদি বুজাইল অইছে,
যেরা ই কালাম হুনে,
হুনিয়া বুজে আর আমল করে।
কেউ জিন্দেগিত তিশ গুন,
কেউ ষাইট গুন,
কেউ একশো গুন বেশি ফল দেয়।”
ধান আর ফুফরা গাছর কিচ্ছা
২৪ বাদে ইছায় তালিম দিবার লাগি আরেক কিচ্ছা হুনাইলা।
কইলা,
“বেহেস্তি বাদশাই অলা এক গিরস্তর লাখান,
যেইন নিজর জমিনো ভালা ধানর জালা বাইন দিলা।
২৫ বাদে রাইত অইয়া হারলে যেবলা হকল মানুষ ঘুমাই গেছইন,
অউ সময় তান এক দুশমনে আইয়া বাইন দেওয়া অউ জমিনর মাজে ফুফরা গাছর বিচি ছিটাইয়া গেলগি।
২৬ হেশে ধানর গাছ যেবলা বড় অইয়া ছড়া ছাড়লো,
অউ সময় এরমাজে ফুফরা গাছও দেখা গেল।
২৭ ইতা দেখিয়া বাড়ির চাকর অকলে তারার মুনিবরে কইলা,
‘আপনে জমিনো খালি ভালা ধান বাইন দিছলা না নি?
অখন ফুফরা গাছ অইলো কুয়াই থাকি?’
২৮ “তাইন কইলা,
‘কুনু দুশমনে ই কাম করছে।’
চাকর অকলে তানরে জিকাইলো,
‘তে আমরা গিয়া অউ ফুফরা গাছ ছাফ করিলতাম নি?’
২৯ মুনিবে কইলা,
‘না,
না,
তুমরা ফুফরা গাছ ছাফ করাত গিয়া,
ধানর গাছও তুলিলিবায়।
৩০ এরলাগি ধান দাওয়ার আগ পর্যন্ত ইতা থাকউক।
বাদে দাওয়ার বালা আমি মানষরে কইমু,
পয়লা হকল ফুফরা গাছ তুলতা,
আর দারু জালানির লাগি আটি বান্দিতা,
বাদে ধান দাইয়া আমার উগারো তুলবা।’ ”
ডেংগা বিচি আর খামিরর কিচ্ছা
৩১ হজরত ইছায় আরক কিচ্ছা হুনাইলা।
কইলা,
“বেহেস্তি বাদশাই অইলো এগু ডেংগা বিচির লাখান।
একজন মানষে এগু ডেংগার বিচি তার জমিনো বাইন দিলো।
৩২ ই বিচি তো হকল জাতর বিচি থাকি হুরু।
অইলে বাইন দেওয়ার বাদে ই গাছ হক্কল জাতর হাগ-তরকারি থাকি বড় অয়,
আর পাখিন্তে আইয়া তার ডালপালাত বাদা বানায়।”
৩৩ এরবাদে আরক কিচ্ছার মাজে কইলা,
“বেহেস্তি বাদশাই অইলো খামিরর লাখান।
একজন বেটি মানষে তিন বস্তা ময়দার মাজে থুড়া খামির মিশাইলো।
খামিরর ফাফে হকল ময়দা ফুলিয়া উঠলো।”
৩৪ হজরত ইছায় কিচ্ছা হুনাই হুনাই হকল নমুনার তালিম দিলা।
কিচ্ছা ছাড়া তাইন কুনু তালিম দিলা না।
৩৫ ইতা হক্কলতা অইলো,
যাতে নবীর মাজদি যেতা বাতাইল অইছিল,
অতা অখন পুরা অয়,
তালিমে ভরা কিচ্ছা হুনাই হুনাই
আমি মাতিমু,
দুনিয়ার পয়লা থাকি যততা বাতুনি আছিল,
অতা অখন খুলমু।
ধান আর ফুফরা গাছর কিচ্ছার অর্থ
৩৬ বাদে ইছায় মানষরে বিদায় দিয়া ঘরো হামাইলা।
অউ সময় তান সাগরিদ অকলে আইয়া কইলা,
“হুজুর,
ফুফরা গাছর কিচ্ছার মানি খান আমরারে বুজাই দেউক্কা।”
৩৭ তাইন কইলা,
“ভালা ধানর জালা যেইন বাইন করইন,
এইন অইলাম আমি বিন-আদম।
৩৮ জমিন অইলো অউ জগত,
আর বেহেস্তি বাদশাইর মানুষ অইলা ভালা বিচ।
ইবলিছর খান্দান অইলো অউ ফুফরা গাছ।
৩৯ যে দুশমনে ফুফরা গাছ বাইন দিছিল,
হে অইলো ইবলিছ।
ধান দাওয়ার সময় অইলো কিয়ামত,
আর দাওরা অকল অইলা আল্লার ফিরিস্তা।
৪০ ফুফরা গাছ আটি বান্দিয়া যেলা দারু জালানি অয়,
কিয়ামতর সময় ঠিক অলাউ অইবো।
৪১ বিন-আদমে তান ফিরিস্তা অকল পাঠাইবা।
যে মানষে নিজে গুনা করে আর আরক জনরে গুনার পথে টানে,
তারা হকলরে ফিরিস্তা অকলে বিন-আদমর বাদশাইর মাজ থাকি একখানো দলা করিয়া,
৪২ দোজখর আগুনিত ফালাইবা।
হিনো মানষে কান্দা-কাটি করবা আর জালা-যন্ত্রনায় দাত কিড়িমিড়ি দিবা।
৪৩ হি সময় আল্লারাইয়া মানষে তারার বেহেস্তি বাফ আল্লা পাকর বাদশাইত নুরানি ছুরতে সুরুজর লাখান ঝিলমিল করবা।
হুনার লাখ কান যার আছে,
হে হুনউক।
বেহেস্তি বাদশাইর আরো তিন কিচ্ছা
৪৪ “হুনো,
বেহেস্তি বাদশাই অইলো,
মাটির তলে লুকাইল কুনু ধনর লাখান।
কুনু মানষে অউ ধন তুকাইয়া পাইলো,
পাইয়া হিরবার গাড়িয়া থই দিলো।
ই ধন পাইয়া খুশি অইয়া হে তার হকল ছামানা বেচিয়া,
অউ জমিন খান খরিদ করলো।
৪৫ “হিরবার,
বেহেস্তি বাদশাই অইলো অলা এক সদাগরর লাখান,
ই সদাগরে খাটি মনি-মুক্তা তুকানিত আছিল।
৪৬ হে একটা দামি মুক্তার খবর পাইয়া,
তার হক্কলতা বেচিয়া অউ মুক্তা খরিদ করলো।
৪৭ “বা বেহেস্তি বাদশাই অলা এক জালর লাখান,
ই জালদি আওরো টান দিলে এর ভিতরে হক্কল জাতর মাছ হামাইলো।
৪৮ মাছে জাল ভরিগেলে জালুয়া অকলে ইখানরে টানিয়া পারো তুললো।
বাদে তারা ভালা ভালা মাছ বাছিয়া চাংগাত থইলো আর বাদ গুইন ফালাই দিলো।
৪৯ তে হাশরর ময়দানো অউ হালত অইবো।
ফিরিস্তা অকলে আইয়া আল্লারাইয়া মানষর দল থাকি,
নাফরমান অকলরে আলগাইয়া দোজখর আগুনিত ফালাইবা।
৫০ হিনো তারা কান্দা-কাটি করবা আর জালা-যন্ত্রনায় দাত কিড়িমিড়ি দিবা।”
৫১ এরবাদে ইছায় তান সাগরিদ অকলরে জিকাইলা,
“তুমরা ইতা হকলতা বুজছো নি?”
তারা কইলা,
“জিঅয়,
বুজছি।”
৫২ তেউ ইছায় তারারে কইলা,
“যে মৌলানা অকলে বেহেস্তি বাদশাইর তালিম পাইছইন,
তারা অলা এক গিরস্তর লাখান,
যে গিরস্তে তান সন্দুক থাকি নয়া আর পুরানা মাল বার করইন।”
হজরত ইছায় কেনে তশরিফ আনছইন (১৩:৫৩-১৭:২৭)
নিজর গাউত হজরত ইছার অসম্মান
৫৩ হজরত ইছায় কিচ্ছা কইয়া কইয়া তালিম দিয়া হারলে ইনথনে গেলাগি।
৫৪ গিয়া তান নিজর গাউর মছিদো হামাইয়া ওয়াজ-নছিয়ত করলা।
তান বয়ান হুনিয়া মানষে তাইজ্জুব অইয়া কইলা,
“ই বেটায় কেমনে অতো ইলিম আর কেরামতি পাইলো?
৫৫ এ কিতা হউ কাঠ মেস্তরির পুয়া নায় নি?
তার মাʼর নাম মরিয়ম নায় নি?
হে ইয়াকুব,
ইউছুফ,
সাইমন আর এহুদার ভাই নায় নি?
৫৬ তার বইনাইন তো আমরার গাউতউ রইরা?
তে হে ইতা ইলিম কই থাকি পাইলো?”
৫৭ অউ লাখান ইছারে লইয়া মানষর দিলো বিতিশনা আইলো।
অউ সময় ইছায় তারারে কইলা,
“নিজর বাড়ি-ঘর বা গাউ-দেশ ছাড়া আর হকল জাগাতউ নবী অকলে সম্মান পাইন।”
৫৮ গাউর মানষর ইমান নাই দেখিয়া,
তাইন হিকানো বেশি কেরামতি দেখাইলা না।