পবিত্র ইঞ্জিল শরিফ তিছরা ছিপারা
আল-লুক
১-২ মহামাইন্য থিওফিলাছ,
আপনার তো জানা আছে,
আমরার মাজে যেতা যেতা ঘটিছে,
ইতা যেরা পয়লা থাকিউ নিজর চউখে দেখছইন আর তবলিগও করছইন,
এরার মুখর কথা হুনিয়া ভালামন্তে সমজিয়া হারি,
বউত মুমিনে লেখাত লাগছইন।
 এরলাগি অখন আমিও আদি-অন্ত হক্কলতা তালাশ করিয়া,
এক এক করি লেখিয়া আপনারে জানানি খান ভালা মনো করলাম।
 অখান থাকি আপনে সমজিতা পারবা,
আপনে আগে যেতা তালিম হুনছইন,
ইতা এক্কেবারে ঠিক।
হজরত এহিয়া আর হজরত ইছার জনম আর পয়লা জিন্দেগি (১:৫-২:৫২)
হজরত এহিয়া (আঃ) অর জন্মর গাইবি খবর
 রাজা হেরোদে যেবলা এহুদিয়া জিলা চালাইরা,
অউ সময় জেরুজালেম টাউনো বায়তুল-মুকাদ্দছর ইমাম অকলর মাজর একজনর নাম আছিল জাকারিয়া।
তাইন বনি ইছরাইলর মুল ইমাম হারুনর খান্দানর আবিয়া দলর মানুষ।
তান বিবির নাম এলিছাবেত,
এইনও হারুনর বংশর মানুষ।
 এরা দুইও জনউ আল্লার নজরো কামিল দীনদার আছলা।
মাবুদর হকল হুকুম-আহকাম ষোলআনা আদায় করতা।
 অইলে এরা আছলা নিআওলাদি,
বিবি এলিছাবেত অইলা আটখুরা বেমারি।
অউ হালতে দুইও জন মুরব্বি অইগেছইন।
 এরমাজে অইন্য দলর ইমামতির দিন শেষ অইয়া তান নিজর দলর ইমামতির বারি আইলো,
তেউ জাকারিয়া আল্লার ঘরো ইমামতিত আছলা।
 ইমামতি কামর নিয়ম মাফিক লটারি মারিয়া তানে পছন্দ করা অইলো,
যাতে তাইন বায়তুল-মুকাদ্দছর পবিত্র হেরেম শরিফো হামাইয়া আগর-খুশবয় জালাইন।
১০ তাইন ভিতরে অতা জালাইরা,
আর বারে বউত মানষে দোয়া-দুরুদ কররা।
১১ আখতাউ আগর-খুশবয় জালানির টেবুলর ডাইনেদি আল্লার একজন ফিরিস্তায় তানরে দরশন দিলা।
১২ ফিরিস্তারে দেখিয়াউ তান দিল কাপিগেল,
জানো ডর আইলো।
১৩ ফিরিস্তায় কইলা,
“ও জাকারিয়া,
ডরাইও না।
হুনো,
আল্লার দরবারো তুমার দোয়া কবুল অইছে।
তুমার বিবি এলিছাবেতর ঘরো এক পুয়া অইবা,
তুমি এন নাম রাখিও এহিয়া।
১৪ অউ পুতে তুমার জিন্দেগিত বউত খুশি বাড়াইবা,
তাইন জনম লওয়ায় আরো বউত জন খুশি অইবা।
১৫ এইন তো মাবুদর নজরো বউত বড় ইজ্জতি অইবা।
জিন্দেগিয়ে কুনুদিনউ আংগুরর শরাব বা কুনুজাত নিশা খাইতা নায়।
তান মাʼর পেটো থাকতেউ পাক রুহে কামিল অইবা।
১৬ আর বনি ইছরাইলর বউত মানষরে তারার মাবুদ আল্লার বায় ফিরাইয়া আনবা।
১৭ তাইন ইলিয়াছ নবীর লাখান হিম্মত আর তাক্কতে মালিকর আগে অইয়া আইবা।
আইয়া বাফ অকলর দিলরে আওলাদর বায়,
আর নাফরমান অকলর দিলরে পরেজগারির বায় ফিরাইবা।
অউ লাখান মাবুদর লাগি এক দল বন্দারে তাইন পুরাপুর তিয়ার করবা।”
১৮ ইতা হুনিয়া জাকারিয়ায় ফিরিস্তারে কইলা,
“এর পরমান কিতা,
আমি কেমনে একিন করতাম?
আমি তো বুড়া অইগেছি,
আমার বউও এক্কেরে মুরব্বি অইগেছইন।”
১৯ ফিরিস্তায় কইলা,
“আমি জিব্রাইল,
আমি আল্লার ছামনে আজির থাকি।
তুমার লগে বাতচিত করিয়া,
অউ খুশ-খবরি তুমারে জানানির লাগিউ আল্লায় আমারে বেজিছইন।
২০ দেখিও,
আমার কথা সময় মত ফলিবো।
অইলে আমার মাত একিন না করায়,
ইখান ফলিবার আগ পর্যন্ত তুমি বোবা বনিযিবায়,
কুন্তা মাততায় পারতায় নায়।”
২১ ইবায় মানষে জাকারিয়ার লাগি বার চাইরা।
বায়তুল-মুকাদ্দছর ভিতরর অউ পাক জাগাত তান দেরি অর দেখিয়া,
তারা হকল চিন্তাত পড়িগেলা।
২২ বাদে জাকারিয়া বার অইয়া আইলা,
অইলে তাইন কুন্তাউ মাততা পারলা না।
তাইন বোবা অইগেলা আর ইশারা-আশারায় বুজাইলা।
ই হালত দেখিয়া মানষে বুজিলিলা,
পাক জাগার ভিতরে তাইন কুনু দরশন পাইছইন।
২৩ ইমামতি কামর বারি শেষ অইয়া হারলে,
তাইন নিজর বাড়িত গেলাগি।
২৪ এরবাদে তান বিবি এলিছাবেতর পেটো হুরুতা আইলো,
এরদায় এলিছাবেত পাচ মাস বাড়ির বারে বার অইলা না।
২৫ তাইন কইলা,
“ইতা তো আল্লাই লিলা-খেলা।
মানষর গেছে আমি যে খুটার ভাগি অইছি,
অউ খুটার শরম হরানির লাগি তাইন আমার বায় খিয়াল করছইন।”
ইছা রুহুল্লার জন্মর গাইবি খবর
২৬-২৭ এলিছাবেতর পেটো যেবলা ছয় মাসর হুরুতা,
অউ সময় গালিল জিলার নাছারত গাউত একজন আবিয়াতি সতী নারী আছলা,
এন নাম বিবি মরিয়ম।
আল্লায় জিব্রাইল ফিরিস্তারে তান গেছে বেজিলা।
তান বিয়া ঠিক অইছিল,
বাদশা দাউদর খান্দানর ইউছুফ নামর একজনর লগে।
২৮ ফিরিস্তায় আইয়া বিবি মরিয়মরে কইলা,
“আছছালামু আলাইকুম;
আল্লা পাকে আপনারে রহমত করছইন,
তাইন আপনার লগে আছইন।”
২৯ ইখান হুনিয়া মরিয়মর মন পেরেশান অইগেল।
তাইন মনে মনে কইলা,
ই ছালামর মানি কিতা?
৩০ ফিরিস্তায় কইলা,
“ও মরিয়ম,
আপনে ডরাইবা না,
আল্লায় আপনারে রহমত করছইন।
৩১ হুনউক্কা,
আপনার ঘরো এক পুয়া পয়দা অইবা,
আপনে এন নাম রাখবা,
ইছা।
৩২ তাইন বউত বড় ইজ্জতি অইবা।
তানরে কওয়া অইবো ইবনুল্লা,
আল্লাতালার খাছ মায়ার জন।
আল্লা মাবুদে তান খান্দানর মুরব্বি বাদশা দাউদর গদি তানরে দিবা।
৩৩ তাইন দুনিয়া আখেরাতো বনি ইছরাইলর উপরে বাদশাই করবা,
তান বাদশাই কুনুদিনউ ফুড়াইতো নায়।”
৩৪ তেউ বিবি মরিয়মে ফিরিস্তারে কইলা,
“ইতা কিলান অইবো?
আমার তো বিয়া-শাদিউ অইছে না।”
৩৫ ফিরিস্তায় কইলা,
“পাক রুহ আপনার উপরে নাজিল অইবা,
আর আল্লার কুদরতি ছায়া আপনার উপরে আইবো।
এরদায়উ আপনার ঘরো যে পাক আওলাদে জনম লইবা,
তানরে ইবনুল্লা,
মানি আল্লার খাছ মায়ার জন কইয়া ডাকা অইবো।
৩৬ হুনউক্কা,
আপনার কুটুম বিবি এলিছাবেতর বেয়াপারে মানষে কইতা না নি,
তান কুনু হুরুতাউ অইতা নায়?
অইলে অখন তো অউ মুরব্বি বয়সো তান পেটোও ছয় মাসর পুয়া আছে।
৩৭ তে আল্লায় পারইন না,
ইলা কুন্তাউ নাই।”
৩৮ মরিয়মে কইলা,
“আমি তো আল্লার বান্দি;
আপনার কথামতোউ হকলতা ফলউক।”
বাদে ফিরিস্তা তান গেছ থাকি বিদায় অইগেলা।
বিবি মরিয়ম বিবি এলিছাবেতর বাড়িত গেলা
৩৯ এরবাদে বিবি মরিয়ম উড়া-তাড়া করি,
এহুদিয়া জিলার এক পাড়িয়া গাউত গেলা।
৪০ গিয়া হনো ইমাম জাকারিয়ার বাড়িত হামাইয়া,
তান বিবি এলিছাবেতরে ছালাম করলা।
৪১ এলিছাবেতে মরিয়মর আওয়াজ হুনার লগে লগেউ,
তান পেটর হুরুতা আখতা লড়িয়া উঠিলা।
তাইন পাক রুহে কামিল অইয়া,
৪২ জুরে জুরে কইলা,
“দুনিয়ার তামাম বেটিন্তর মাজে তুমিউ কপালি,
তুমার পেটর ছাবালও কপালি।
৪৩ আমার মুনিবর মা আমার ঘরো তশরিফ আনছইন,
আমার অতো বড় কপাল কিলা অইলো?
৪৪ আমি তুমার আওয়াজ হুনার লগে লগেউ,
আমার পেটর গেদায়ও খুশিয়ে লড়িয়া উঠিছইন।
৪৫ তুমি তো কপালি বেটি,
কারন মাবুদে তুমারে যেতা জানাইছইন,
তুমি দিলে-জানে ইতা একিন করছো।”
৪৬ অউ বিবি মরিয়মে কইলা,
 
“আমার কলবে তারিফ করের আমার মাবুদর,
৪৭ বেহেস্তি খুশিয়ে ভরিগেছে আমার অন্তর,
তরাওরা চান্দ আইছইন,
অভাগিনির ঘর।
৪৮ চউখ তুলিয়া চাইছইন দয়াল,
কাংগাল বান্দির বায়,
এরদায়উ তামাম জাতিয়ে সাবাস সাবাস গায়,
বড় কপালি কইবা মোরে,
যুগ-যুগান্তর।
 
৪৯ শক্তিমানে করলা মোরে অতো বড় কাম,
আমার লাগি অইছইন তাইন কুদরতি আছান,
তাইনউ তো ছুবহানাল্লা,
পাক-পবিত্র তাইন।
৫০ যেরা তানে তাজিম করি রইন ডরাইয়া,
রহম করইন তাইন ইতারে নিজর জানিয়া,
ওয়ারিশে ওয়ারিশে রহম,
তাইনউ বিলাইন।
 
৫১ তানউ কুদরতি আতে করছইন মহা কাম,
মনর গরিমায় যেতায় করে বড়াই শান,
ইতারে খেদাইয়া দিয়া,
বৈতল বানাইছইন।
৫২ রাজা-বাদশাইন হকির অইলা গদি খুয়াইয়া,
হকির অকল বাদশা অইলা রহমত পাইয়া,
উচা-নীচা হকির-বাদশা,
তাইনউ বানাইছইন।
 
৫৩ উপাসি কাংগালরে দিলা ভালা ভালা খানি,
ভুকাসির পেটো গেল দামি দানা-পানি,
ধনি জনরে খালি আতে,
খেদাইয়া দিছইন।
৫৪ তাইন যেলা ওয়াদা করছলা ময়-মুরব্বির লগে,
অলাউ তো আছান করছইন বনি ইছরাইলরে,
বনি ইছরাইল অইলা আল্লার আপন গুলাম।
 
৫৫ ইব্রাহিমরে ইয়াদ রাখছইন রহম বরকত দিবা,
লগে তান খান্দানেও অউ দয়া পাইবা,
চিরকালিন অউ ওয়াদা মনো রাখিছইন॥”
 
৫৬ বিবি মরিয়ম তান কুটুম এলিছাবেতর গেছে তিন মাস রইলা,
হেশে তান নিজর বাড়িত গেলাগি।
হজরত এহিয়া (আঃ) অর জনম
৫৭ বাদে মিয়াদ পুরা অইয়া হারলে এলিছাবেতর ঘরো এক পুয়া অইলা।
৫৮ মাবুদে তানরে অতো বড় রহম করছইন হুনিয়া,
আরি-ফরি আর খেশ-কুটুম অকল আইয়া তান লগে খুশি-বাসি করলা।
৫৯ ইহুদি অকলর রেওয়াজ মাফিক জন্মর আট দিনর দিন,
পুয়ার মছলমানি আর আকিকা করানির লাগি তারা হকল দলা অইলা।
তারা চাইলা,
বাফর নামর লাখান পুয়ার নামও অউক।
৬০ অইলে মাʼয় ইখান মানলা না,
তাইন কইলা,
“না,
এর নাম অইবো এহিয়া।”
৬১ তারা কইলা,
“তুমার খেশ-কুটুমর মাজে তো ইলা নাম কেউরর নাই।”
৬২ তেউ তারা ইশারায় পুয়ার বাফরে জিকাইলা,
তাইন কুন নাম পছন্দ করইন।
৬৩ জাকারিয়ায় তারার গেছ থাকি খাতা-কলম নিয়া লেখলা,
“তার নাম এহিয়া।”
অউ তারা হকল তাইজ্জুব অইগেলা।
৬৪ আর লগে লগেউ জাকারিয়ার জবান খুলি গেল,
তাইন মাত-কথা মাতিলা আর আল্লার শুকরিয়া আদায় করলা।
৬৫ ইতা দেখিয়া আরি-ফরি হকলে ডরাইগেলা।
এহুদিয়া জিলার পাড়িয়া অঞ্চলর হকল মানষর মুখে মুখে অউ খবর রটিগেলো।
৬৬ যতো মানষে ই ঘটনা হুনছিল,
তারা হকলেউ মনে মনে চিন্তা করি কইলো,
বড় অইয়া হারলে ই পুয়া কিতা অইবো।
কারন মাবুদর কুদরতি আত তান উপরে আছিল।
হজরত জাকারিয়া (আঃ) নবীর মুখো গাইবি খবর
৬৭ বাদে পুয়ার বাফ জাকারিয়া,
পাক রুহে কামিল অইয়া অউ গাইবি খবর কইলা,
 
৬৮ “শুকরিয়া জানাই আমি বন্দায় আল্লা মাবুদর,
আছান করছইন তাইন নিজে আপন ইছরাইলর,
খিয়াল করি করলা আজাদ নিজর গুলাম দল।
 
৬৯ আমরার লাগি পছন্দ করলা দাউদ খান্দানরে,
বল-তাক্কতি কান্ডারিরে আনলা অখান থনে,
দেখাইলায় দয়াল মোরে নাজাত কররা জন।
 
৭০ নবী অকলে জবানদি কইছলা বউত আগে,
তাইনউ কওয়াইছলা ইতা নবী অকলর মুখে,
তাক্কতি কান্ডারিউ অইবা দাউদ কুলর বল।
 
৭১ দুশমন অকলর কবজা থাকি তাইন বাচাইলা,
ঘিন-ইংসা কররা থাকি অখন ফানা দিলা,
আমরারে বাচাইলা আইয়া দয়াল মউলার জন।
 
৭২ বাচাইলা আমরারে খালি ময়-মুরব্বির খাতিরে,
কছম করা পাক ওয়াদা পুরানির নিয়তে,
ময়-মুরব্বিরে জবান দেওয়ায় আমরা বাচিলাম।
 
৭৩ কছম করি ওয়াদা করছলা দয়াল আল্লায়,
ইব্রাহিমরে জানাইলা তাইন নাজাতর উপায়,
ইব্রাহিম নবীউ অইলা আমরার আসল বাফ।
 
৭৪-৭৫ আমরারে বাচাইতা করি মউলার অউ কছম,
দুশমন থাকি বাচার লাগি বাতাই দিলা নিয়ম,
জিন্দা যদিন আছি আমরা নিচিন্তা রইতাম।
 
ডর-খফ ছাড়া আমরা যানু করি এবাদত,
পরেজগার আর ছহি পথে থাকি নিরাপদ,
তান ছামনে রইয়া যাতে করি তান খেজমত।
 
৭৬ ওরে আমার মায়ার পুত এহিয়া বাবাজি,
তুমারে তো ডাকা অইবো আল্লাতালার নবী,
মুনিবর আগে রইয়া ছহি করবায় পথ।
 
৭৭ বাতাই দিবায় তুমি তান বন্দা অকলরে,
গুনা মাফির পথ চিনবা তুমার তালিমে,
বাতাইয়া দিবায় বাবা নাজাত পাওয়ার পথ।
 
৭৮ আমরার আল্লার রহম আর হউ মহব্বতে,
বেহেস্তি নুরর এক সুরুজ আইবা উপরেতে,
আমরার উপরে আইয়া হারি রাখিবা নজর।
 
৭৯ মউত আর আন্দারির গাতো যেরা কাটায় দিন,
নুরর পথ দেখবা তারা করিয়া একিন,
আমরারেও শান্তির পথে চালাইবা অউ জন।
 
অউ হুজুর নাজিল অইয়া দেখাইবা কুদরত,
তাইনউ হউ ওয়াদা করা আল্লাই রহমত॥”
 
৮০ বাদে এহিয়া আস্তে আস্তে বড় অইলা,
লগে অইয়া তান রুহানি বলও বাড়িলো।
বনি ইছরাইলর ছামনে খুলা-মেলা জাইর অইবার আগ পর্যন্ত,
তাইন মরুভুমির মাজে দিন কাটাইলা।